নিজস্ব প্রতিনিধি, আলীকদম:

গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে আলীকদম উপজলো নির্বাহী অফিসারের পরিচালিত অভিযানে আটক ৭২টি গরু-মহিষের মালিকানা দাবী করে আবেদন করেছেন ৮ জন ব্যবসায়ী। আবেদনপত্রের সাথে সাতটি গরু ক্রয়ের ৭টি চুক্তিপত্রও সংযুক্ত করা হয়।

প্রাপ্ত আবেদনপত্র ও ক্রয় চুক্তিতে দেখা যায়, বাছুরসহ ২৮টি মহিষ এবং ৪৪টি গরুর বিক্রেতা নয়াপাড়া ও কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৬ জন স্থানীয় ম্রো। আবেদনকারী শফিউল আলম জানান, তারা ৮ জন ব্যবসায়ী মুরুংদের কাছ থেকে গত কয়েকদিন আগে গরু এবং মহিষগুলো ক্রয় করেন। তাদের কাছে গরু-মহিষ ক্রয় চুক্তিপত্র আছে।

‘অভিযানে আটককৃত ৭২টি গরু-মহিষ ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং ব্যবসায়ীদের ক্রয়কৃত হওয়ায় কাগজপত্র পর্যালোচনা সাপেক্ষে গরু-মহিষগুলি ফেরত পাওয়ার এ আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন শফিউল আলম, রুহুল আমিন, মোঃ বাছের, জয়নাল, নুরুল কবির, শামশুল আলম, জাহাঙ্গীর আলম ও তৌহিদুল ইসলাম রাশেদ নামের ৮ জন ব্যবসায়ী।

আবেদনে দাবী করা হয়, আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের মায়ানমার সীমান্তবর্তী বসবাসরত মুরুং, ত্রিপুরা ও মার্মা সম্প্রদায় জুম চাষের পাশাপাশি গরু, মহিষ প্রতিপালন করে থাকেন। ২০১৫ সালে ¤্রাে ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠনের ৭৯ জন সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করলে তাদেরকে স্বাবলম্বি করার জন্য সরকারের তরফে গরু-বাচুর অনুদান দেয়া হয়। কুরুকপাতা ইউনিয়নের পাহাড়ি পরিবেশে লালিত-পালিত গরু-মহিষগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ¤্রােসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দারা। কিছু বিতর্কিত লোক স্থানীয় জুমিয়াদের লালিত-পালিত পাহাড়ি গরুগুলো ‘বিদেশী গরু’ আখ্যা দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়েছে।

আবেদনকারী শফিউল আলম বলেন, গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাত অনুমান ৮টার সময় পুলিশ-বিজিবির সহায়তা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহরুবা ইসলাম অভিযান পরিচালনা করে তাদের ক্রয় করা ২৮টি বাছুরসহ মহিষ এবং ৪৪টি গরু নয়াপাড়া ইউনিয়নের বাচা মিয়ার চর ও কোলারীর ঘোনা এলাকা থেকে আটক করেন।

আবেদনকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারা ৮ জন ব্যবসায়ী গরু-মহিষগুলো নয়াপাড়া ইউনিয়নের কেংকই ম্রো কার্বারী এবং কুরুকপাতা ইউনিয়নের আফরিন ম্রো, মেনদন ম্রো, মেনলে ম্রো, অংচিং ম্রো, ও আকেও ম্রো থেকে ক্রয় করেন। এ সংক্রান্ত ক্রয় ভাউচার ও বিক্রয় চুক্তিপত্র আছে তাদের।

ইউএনও’র কাছে করা এ আবেদনপত্রের অনুলিপি দেয়া হয় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, সেক্টর কমা-ার, বিজিবি, বান্দরবান, ডেট কমান্ডার, ডিজিএফআই, বান্দরবান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক, আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার, আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি) এর অধিনায়ক, বান্দরবান পুলিশ সুপার, আলীকদম থানার ওসি ও আলীকদম প্রেসক্লাব সভাপতিকে।

আবেদনকারীগণ বলেন, গরু-মহিষগুলো আলীকদম থেকে ক্রয়-বিক্রয়কালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক নিয়োজিত ইজারাদারকে ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়। বিনাট্যাক্সে কোন গরু-মহিষ আলীকদম থেকে অন্য উপজেলায় নেওয়া হয় না। ইউএনওর অভিযানে আটক হওয়া গরু-মহিষগুলো যদি মালিকানা নির্ধারণ ছাড়া নিলাম দেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যপাবে।

এ ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলার পাহাড়ি পরিবেশে মুরুংসহ স্থানীয়রা গরু প্রতিপালন করছে। সে সব কেউ বেচা-বিক্রি করা অবৈধ হওয়ার কথা নয়। অভিযানে আটককৃত গরু যদি কাগজপত্র মতে স্থানীয়দের হয় তাহলে নিলাম দেয়া যাবে না।

ইউএনও’র অভিযানে গরু ও মহিষ আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সরকার বলেন, অভিযানটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার করেন। এতে পুলিশ ও বিজিবি সহযোগিতা করেছেন মাত্র। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত উপজেলা প্রশাসনের।